Skip to main content

আমরা ওনেকেই স্যাটেলাইটের নাম শুনেছি। এটা আসোলে কি এবং এর কাজ কি? তা জানি না। আসুন জেনে নেই,,,,

স্যাটেলাইট এর বার্ড আই ভিউ(পাখির মত ভূ-পৃষ্ঠের অনেক ওপর থেকে দেখা) এর কারণে আমরা উপর থেকে পৃথিবীর একটি বৃহৎ অংশ দেখতে পাই। এই কারণে ভু-পৃষ্ঠে স্থাপিত কোনো যন্ত্রের চেয়ে অধিক দ্রুত এবং নিখুঁত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে স্যাটেলাইট। এমনকি কোনো বস্তু পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট টেলিস্কোপ এর চেয়ে অধিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। স্যাটেলাইটকে এত উপরে স্থাপনের মুল কারণ হল যাতে মেঘ, ধুলাবালি কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে। স্যাটেলাইট স্থাপনের পূর্বে টিভি সিগন্যাল বেশি দূর যেতে পারতো না। কারণ, টিভি সিগন্যাল সরলরেখা বরাবর কাজ করে। এখন টিভি সিগন্যাল, ফোন কল প্রথমে পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইটে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইট সিগন্যাল গ্রহণের পর তৎক্ষণাৎ সেটি আবার পৃথিবীতে আমাদের প্রত্যাশিত স্থানে ফেরত  পাঠায়।

স্যাটেলাইট এর গঠন

স্যাটেলাইট বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। প্রত্যেক স্যাটেলাইট এর ২টি সাধারণ অংশ থাকে ঃ অ্যান্টেনা এবং শক্তির উৎস। অ্যান্টেনা তথ্য গ্রহণ ও সংগ্রহের কাজ করে থাকে। সোলার প্যানেল অথবা ব্যাটারি, উভয়েই শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। নাসা’র স্যাটেলাইটে ক্যামেরা এবং কিছু সেন্সর লাগানো থাকে ।

স্যাটেলাইট কিভাবে পাঠানো হয়

কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপন করার জন্য আলাদা মহাশূন্য যান রয়েছে। একে বলা হয়  “উৎক্ষেপণ যন্ত্র (Launch Vehicle)। কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপনের ক্ষেত্রে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মাথা ঘামাতে  হয়, তা হলো অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং মহাশূন্য যানটির গতির সমতা রক্ষা করা। কারণ অভিকর্ষজ ত্বরণ আমাদের উৎক্ষেপণ যন্ত্রকে পৃথিবীর দিকে টানতে থাকে।
দুই ধরনের উৎক্ষেপণ যন্ত্র রয়েছে – অপচয়যোগ্য রকেট এবং মহাশূন্য শাটল। অপচয়যোগ্য রকেটগুলো স্যাটেলাইট স্থাপন শেষে ধ্বংস হয়ে যায়। অপরদিকে মহাশূন্য শাটলগুলো স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজে বারবার ব্যবহার করা যায়। উৎক্ষেপণ যন্ত্রের গতিবেগ উচ্চতার উপর অনেকটা নির্ভর করে। কম উচ্চতার কক্ষপথে (Low Earth Orbit = LEO) এর বেগ ৭.৮ কি.মি./সেকেন্ড, বেশি উচ্চতার কক্ষপথে (Geostationary Earth Orbit =GEO) এর বেগ ৩.১  কিমি/সে ।

স্যাটেলাইটের প্রকারভেদ

কক্ষপথ এর ভিত্তি করে স্যাটেলাইট সিস্টেম কে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।

  • LEO ( Low Earth Orbit ) – পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৬০-২০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। সাধারণত পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইটগুলো এই কক্ষপথে থাকে। পৃথিবী পৃষ্ঠের খুব কাছে থাকায় এই কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীকে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। আন্তর্জাতিক স্পেস ষ্টেশন এই কক্ষপথে অবস্থিত।
  • MEO ( Medium Earth Orbit) – পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ২০০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। সাধারণত জিপিএস স্যাটেলাইট গুলো এই কক্ষপথে থাকে। এই কক্ষপথের স্যাটেলাইট গুলোর গতিবেগ মন্থর। এই স্যাটেলাইটগুলো পাঠাতে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়।
  • GEO  (Geostationary Earth Orbit) – GEO পৃথিবী  পৃষ্ঠ থেকে ৩৬০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। এই কক্ষপথে অ্যান্টেনা এর অবস্থান নির্দিষ্ট থাকে। সাধারণত রেডিও এবং টিভি এর ট্রান্সমিশনের কাজে ব্যাবহার করা হয়।

স্যাটেলাইট এর অন্যান্য ব্যবহার

  • স্যাটেলাইট খামার গুলোর ডিজিটাল মাপ তৈরি করে । ফলে কৃষক দের মাটির গুনাগুণ , ফসলের ফলন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়।
  • সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতি বছরই অনেক মানুষ মারা যায়। স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সড়কের খুঁতগুলো বের করতে পারি।
  • নগরায়ন এর কাজে অনেক অনেক উপকারে আসে।
  • এখন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নানাবিধ পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়। ঘরে বসেই এদের অবস্থান ট্র্যাক করতে স্যাটেলাইট আমাদের সাহায্য করে ।
  • বাতাসের বেগ এবং বায়ু দূষণের পরিমাণ নির্ণয়ে স্যাটেলাইট আমাদের সাহায্য করে থাকে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করার কাজে স্যাটেলাইট সবচেয়ে বেশি কাজে আসে।
বিশ্বের ১০ টি দেশে স্যেটেলাইট লঞ্জ করার ক্ষমতা আছে।

স্যাটেলাইট নিয়ে আরো কিছু কথা

  • ১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক-১ নামে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে
  • ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে  তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক-২ নামে আরেকটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে যাতে ছিল লাইকা নামে একটি কুকুর।
  • ১৯৫৮ সালের ১-লা জানুয়ারি আমেরিকা প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে এক্সপ্লোরার-১ নামে।
  • একটি স্যাটেলাইট কে কক্ষপথে তার অবস্থান ধরে রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ দরকার। এটি হচ্ছে ২৮,২০০ কিমি/ ঘন্টা ।
  • ২০০৯ সালে একটি আমেরিকান এবং একটি রাশিয়ান স্যাটেলাইট এর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
  • স্যাটেলাইট খুব ছোট ও হতে পারে। যেমন ১০ সেন্টিমিটার সাইজ এর।
  • স্যাটেলাইট কে মিসাইল এর মাধ্যমে ধ্বংস করাও যেতে পারে।

আশার কথা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১ নামে একটি স্যাটেলাইট প্রথম বাংলাদেশী ভূ-সমলয় যোগাযোগ স্যাটেলাইট যা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন দ্বারা পরিচালিত হবে। এটি ২০১৭ সালে উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি 119° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ভূ-সমলয় স্লটে অবস্থিত করা হবে বলে আশা করা হয়। ফ্রান্সের থেলাস এলেনিয়া স্পেস কোম্পানি এটি তৈরি করবে। এটি তৈরিতে খরচ হবে ২৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১৯৫১ কোটি টাকা)। সুদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের দেশ থেকেই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা যাবে । 

Comments

Popular Post

আসুন খুব সহজে HTML শিখে ফেলি

HTML কি? HTML  একটা কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ, যা পৃথিবীর বিশাল তথ্য-ভান্ডারকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রদর্শনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। একটা ওয়েব পেজের মূল গঠন তৈরি হয়  HTML  দিয়ে। HTML  কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নয়, একে  Hyper Text Mark Up Language  বলা হয়।  Mark Up Language  এক সেট  Mark Up  ট্যাগের সমন্বয়ে গঠিত হয়। একটা ওয়েব পেজের বিভিন্ন অংশ ব্রাউজারের মাধ্যমে কিভাবে প্রদর্শিত হবে, তা  HTML এ  Mark Up  ট্যাগ সমূহ ব্যবহার করে প্রকাশ করা হয় । HTML এর ইতিহাস HTML  বা  Hyper Text Mark Up Language তৈরি করেছেন টিম বার্নাস-লী।  HTML  তৈরির উদ্দেশ্য ছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য উপাত্ত দ্রুত পৃথিবীর বিভ্ন্নি স্থানে আদান প্রদানের ব্যবস্থা করা। ১৯৯০ সালের দিকে  NCSA  কর্তৃক ডেভলপকৃত মোজাইক ব্রাউজারের মাধ্যমে HTML পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯৭ এর জানুয়ারীতে  WC3  কর্তৃক প্রথম ডেভলপকৃত  HTML3.2  প্রকাশিত হয়। একই বছরে শেষে ডিসেম্বরে  WC3 HTML  এর নতুন সংস্করণ  HTML4.2  প্রকাশ করে। ২০১০ সালে বর্তমানে প্রচলিত  HTML  এর সর্বশেষ ভার্সন  HTML5 জনসম্মূখে পরিচিতি লাভ করে। প

আসুন বাংলায় Programing C শিখি...

প্রোগ্রামিং কেন : বাংলায় সি প্রোগ্রামিং থেকে কিভাবে প্রোগ্রামিং করতে হয়, কিভাবে নিজে একটা প্রোগ্রাম লিখব পাশা পাশি একটা সফটওয়ার বা প্রোগ্রাম লিখতে কি কি লাগবে, এসব সম্পর্কে জানা যাবে। আমরা যত গুলো অটোমেটিক মেশিন দেখি, সব গুলোই এক বা একের অধিক প্রোগ্রাম দিয়ে চলে। আর প্রোগ্রামটা লেখা হয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে। প্রোগ্রামিং জানলে যে শুধু কম্পিউটারের জন্যই সফটওয়ার তৈরি করা যাবে এমন না, সব কিছুর জন্যই প্রোগ্রাম বানানো যাবে। ছোট্ট একটা ক্যালকুলেটর হতে শুরু করে রোবোট বা এয়ারক্রাফট পর্যন্ত সব কিছুর প্রোগ্রাম। অনেক গুলো Programming Language রয়েছে শেখার জন্য। এ গুলোর মধ্যে জনপ্রিয় একটা হচ্ছে এই C Programming। ডেনিস রিচি (জন্ম সেপ্টেম্বর ৯, ১৯৪১ – মৃত্যু অক্টোবর ৮, ২০১১) এর ডেভেলপ করা এই সি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে নতুন অনেক গুলো ল্যাঙ্গুয়েজই তৈরি হয়েছে পরবর্তিতে। এ জন্য এই একটি ল্যাঙ্গুয়েজ ভালো করে শিখলে পরবর্তিতে অনেক গুলো ল্যাঙ্গুয়েজে সহজেই কোড লেখা যায়। কম্পিউটারকে ইন্সট্রাকশন দেওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রোগ্রামিং। ইন্সট্রাকশন গুলো কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে লিখতে হয়। যে নিয়ম গুলো মেনে প্

java টিউটোরিয়াল a টু z

জাভাস্ক্রিপ্ট কি ? (What is JavaScript ?) জাভাস্ক্রিপ্ট একটা জনপ্রিয় স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ, যা ওয়েব পেজের ইন্ট্রকটিভিটি ও ফাংশনালিটি বৃদ্ধি, ফরম ভেলিডেশন, ব্রাউজার নির্দেশ, সময় ও তারিখ নির্দেশ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়।জাভাস্ক্রিপ্ট ক্লায়েন্ট  এবং সার্ভার উভয় দিকেই কাজ করতে পারে। তাই ইহা ইউজারের নিকট থেকে ডাটা নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রসেস সম্পন্ন করে সার্ভারে প্রেড়ণ করতে সক্ষম। জাভাস্ক্রিপ্ট  ECMA  ইন্টারন্যশনাল অর্গানাইজেশন কতৃক উদ্ভাবিত এবং তৈরি করেছিলেন ব্রান্ডন এইচ  (Brendan Eich) । জাভাস্ক্রিপ্ট এর অফিসিয়াল নাম ছিল  ECMAScript  । অনুশীলন প্রজেক্ট <html> <head> <title> www.tutohost.com</title>   <style> body{background: #FFC} </style>  <script type="text/javascript"> </script>   </head> <body> <form> <input type ="button" value = "Click Me" onClick="alert('Welecome to www.tutorialbd.com')"> </form> </body>  </html> একটা